বনানীর এফ আর টাওয়ারে গত ২৮ মার্চ অগ্নিকাণ্ডের দিনে লাখ জনতা যখন দর্শনার্থী হয়ে ছবি তোলা ও ভিডিও ধারণে ব্যস্ত, তখন শিশু নাঈম ইসলাম আগুন নেভানোর কাজে ব্যবহৃত ফায়ার সার্ভিসের একটি পাইপের ছিদ্র অংশ দুই হাতে চেপে ধরে নিরন্তর চেষ্টা করে যাচ্ছিল, যেন সবটুকু পানি আগুনে গিয়ে পড়ে।
নাঈমের এ ছবিটি মুহূর্তেই সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে। নাঈম পরিণত হয় সুপারহিরো বালকে।
ছবি দেখার পর নাঈমের মায়ের সঙ্গে মোবাইলে কথা বলে তার জন্য পাঁচ হাজার ডলার ঘোষণা করেন যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী ওমর ফারুক সামি। পাশাপাশি তার পড়াশোনার দায়িত্ব নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
এর পর শুরু হয়ে যায় নাঈমকে নিয়ে নাটক। একটি অনুষ্ঠানে পুরস্কারের সেই অর্থ এতিমখানায় দান করার ঘোষণা দেয় সে। এরপর সোমবার (১ এপ্রিল) সকাল থেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় ভাসতে থাকে কিছু পোস্ট। সেখানে দেখা যায় ‘নাঈমকে ৫ হাজার ডলার পুরস্কার দিচ্ছেন না সেই প্রবাসী। কারণ হিসেবে উল্লেখ করা হয় নাঈম রাজনৈতিক শিকার।’
তবে নিজের অবস্থানে অটল আছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রবাসী। বিষয়টি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। তার সেই পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘অনাকাঙ্ক্ষিত সব কর্মকাণ্ড দেখে হতভম্ব।
আসসালামু আলাইকুম,
আমরা যারা প্রবাসী তারা দেশকে খুবই ভালোবাসি। দেশের কল্যাণে কিছু করার চেষ্টা করি। কিছু করতে না পারলে মহান আল্লাহর কাছে দেশের জন্য দোয়া করি। দেশের আকাশে যখন কালো মেঘ দেখি আমরা দুশ্চিন্তায় পড়ে যাই। সেই ধারাবাহিকতায় বনানীর মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডে আমরা মর্মাহত হই। সেদিন এক ছোট শিশুর আগুন নিয়ন্ত্রণে সহযোগিতার প্রচেষ্টা দেখে আমার হৃদয়ে নাড়া দেয় এবং আমি তাকে পুরস্কৃত করার ঘোষণা দেই। আমি যদি নাঈমকে ব্যক্তিগত চিনতাম তাহলে ঘোষণা দেওয়ার প্রয়োজন ছিল না নিজেই পাঠিয়ে দিতাম।’
তিনি লেখেন, ‘সুদূর আমেরিকা থেকে পরিচয় পাওয়াটাও কঠিন বলে মিডিয়ার আশ্রয় নেই এবং তাকে খুঁজে যোগাযোগ করি। সেক্ষেত্রে মিডিয়া আমাকে সহযোগিতা করেছে। মিডিয়ার মাধ্যমে তার মায়ের সাথে আলাপ করে জানতে পারি সে পুলিশ হতে চায় কিন্তু তাদের আর্থিক অবস্থা ভালো না তখনই আমি তার পড়ালেখার দায়িত্ব নেই। কিন্তু এই স্বাভাবিক একটা ইস্যু নিয়ে দেশে তুলকালাম কাণ্ড হচ্ছে। এসব সত্যি খুবই দুঃখজনক। একটি বিভ্রান্ত অনেকটা হতাশার জন্ম দেয়। সুতরাং হতাশা দূর করা আমাদের সবার দায়িত্ব।’
ওমর ফারুক লেখেন, ‘ব্যস্ততার প্রবাস থেকে নাঈম ও তার মায়ের সাথে আলাপকালে বলেছিলাম আমি তার পাশে আছি। আজ আবারও বলছি, নাঈমের পুলিশ হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে পাশে থাকব। বিশ্বের দুই কোটি প্রবাসীদের ভালোবাসা স্বরূপ নাঈমকে পুরস্কারের টাকা দেব ইনশাআল্লাহ।’
তিনি লেখেন, ‘পরিশেষে বলব আমাদের সবার উচিত দেশ, সমাজ ও দেশের মানুষ নিয়ে ভাবা। দেশের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা এতই অস্বাভাবিক যে, মানুষের ভালোবাসা, আবেগ, অনুভূতিকে কোন পর্যায়ে পৌঁছানো হয় কেউ জানে না। আধুনিক বিশ্বে তথ্যপ্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের পরিবর্তে আমরা অপ্রয়োজনে বেশি ব্যবহার করি। আধুনিক এই বিশ্বের যুবকরা প্রযুক্তিতে অনেক এগিয়ে। বিশ্ব যখন এগিয়ে আমরা তখন পিছিয়ে থাকার মানেই হয় না। আমাদের উচিত প্রযুক্তির মাধ্যমে কীভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণ করা যায় বা উদ্ধার অভিযান সহজ হয় সেইসব নিয়ে পর্যালোচনা করা। অপ্রয়োজনীয় বা অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু নিয়ে সময় নষ্ট করার কোনো যৌক্তিকতা নেই।’
যুক্তরাষ্ট্রের এই প্রবাসী আরও লেখেন, ‘দেশ ও দশের উন্নতির জন্য আমাদের প্রযুক্তি ব্যবহার হবে এই প্রত্যাশা করছি।
নাঈম যেন পড়ালেখা করে একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান পুলিশ অফিসার হয়ে দেশের সেবা করতে পারে আপনারা এই দোয়া করবেন।’
Desing & Developed BY EngineerBD.Net
Leave a Reply